হঠাৎ করে করোনা-ভাইরাসের মধ্যে কেন শপথ নিলেন আ.লীগের দুই এমপি
শপথ নিলেন আ.লীগের দুই এমপি শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম এবং মো…
এখানে আপনি আপনার সর্বাধিক জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তরগুলি পাবেন
জানেন কি, সম্প্রতি যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে সেটা নতুন হলেও এর ইতিহাসটা কিন্তু অনেক পুরানো। ভাইরাসের শ্রেনীবিন্যাস থেকে জানা যায় করোনা ভাইরাস হচ্ছে নিদুভাইরাস শ্রেণীর অন্তর্গত করোনা ভাইরদা নামক পরিবারের একটি ভাইরাস। এটির উপগোত্র হচ্ছে করোনা ভাইরিনা। আর করোনা ভাইরাসের এই প্রজাতিটির নাম হচ্ছে “২০১৯-নভেল করোনা ভাইরাস”। নভেল করোনা ভাইরাস টি আমাদের কাছে করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। ল্যাটিন ‘corona’ (মুকুট) শব্দ থেকে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে একে দেখা যায় অনেকটা মুকুটের মত। আর একারণেই এর নাম রাখা হয়েছে ‘করোনা’। এখন পর্যন্ত মোট ৭ ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে যা নতুন করে তাদের মধ্যে জীনগত পরিবর্তন করে মানুষকে আক্রান্ত করছে। এটি মানুষের ফুসফুসকে আক্রান্ত করে এবং সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো সংক্রমিত হয়। ভাইরাসটির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর সাথে সার্স এবং মার্স ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০০২ সালের সেই সার্স ভাইরাসে তখন প্রায় ৮’শ র মতো মানুষ মারা গিয়েছিল। ২০১২ তে মার্সের প্রভাবে প্রাণ হারায় অসংখ্য মানুষ। সার্স এবং মার্স ভাইরাস করোনা ভাইরাসেরই ভিন্ন প্রজাতি। নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমনে যে রোগ হয় তাকে বলা হয় কোভিড-১৯।
কোভিড -19 হ'ল সর্বাধিক সন্ধান পাওয়া করোনভাইরাস দ্বারা সংক্রামক রোগ। এই নতুন ভাইরাস এবং রোগটি 2019 সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই অজানা ছিল।.
আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন ব্যক্তিকে জনসমাগম থেকে আলাদা করে চিকিৎসকের নজরদারিতে রাখার নাম হলো কোয়ারেন্টাইন। সে সুস্থ হতে পারে, আবার নাও পারে, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে কিন্তু তার মধ্যে কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি- এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইনের সময়কাল নির্ভর করে সংক্রামক রোগ জীবাণুর ছড়িয়ে পড়ার সময়কালের ওপর। উদাহরণস্বরূপ, ইবোলা রোগের সময় কোয়ারেন্টাইনের সময়কাল ছিল ২১ দিন। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন এভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে উপসর্গ দেখা দেবে। কোয়ারেন্টাইন থেকে লক্ষণ প্রকাশ না হলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয়। কোয়ারেন্টাইনে রাখা অবস্থায় উপসর্গ দেখা দিলে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে।
আইসোলেশন হচ্ছে- সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে রাখার প্রক্রিয়া। সংক্রমণ রোধে অসুস্থ রোগীদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়। কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে বা ধরা না পড়লেও তার মধ্যে উপসর্গ থাকে তখন তাকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই হলো আইসোলেশন। রোগীর হাঁচি-কাশি, মল-মূত্র অন্য কারো সংস্পর্শে যাবে না তাই বিশেষ এই পদ্ধতি। জীবাণু যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এজন্য রোগীকে যত রকম ব্যারিয়ার দেওয়া সম্ভব, আইসোলেশনে তা দেওয়া হয়। বলা যায়, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য, আর কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে সুস্থ বা আপাত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য। ব্রেকিংনিউজ/ এসএ
লক্ষণ * করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। * এর সঙ্গে সঙ্গে থাকে জ্বর এবং কাশি। * অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া। * হতে পারে নিউমোনিয়া। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। প্রতিকার যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। তবে- * রক্ষার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। * ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন বার বার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা। * আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরুন, আর নিজে অসুস্থ না হলেও, অন্যের সংস্পর্শ এড়াতে মুখোশ পরুন। কেননা চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে কমপক্ষে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটি এখন চীনের অন্যান্য শহর এবং চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এক ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে।
করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধ বা চিকিত্সার জন্য কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই (COVID-19)। শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য মানুষের সহায়ক যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।.
নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি COVID-2019 এর বিরুদ্ধে কার্যকর নয় এবং ক্ষতিকর হতে পারে: ধূমপান, একাধিক মুখোশ পরা। যাই হোক, আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় তাহলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা সেবা নিন যাতে আরো গুরুতর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় এবং আপনার সাম্প্রতিক ভ্রমণের ইতিহাস আপনার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর সাথে শেয়ার করুন. ১. ঘরের বাইরে যখন যাবেন গ্লাভস বা হাতমোজা পড়ুন। বাসে বা যে কোনো গণপরিবহনেও হাত ঢেকে রাখুন গ্লাভসে। যদি কখনও সামাজিক প্রয়োজনে হাত মেলাতে বা খাওয়ার জন্য গ্লাভস বা হাতমেোজা খুলতেও হয়, ওই হাতে মুখ চোখ নাক স্পর্শ করা যাবে না। আবার গ্লাভস পরার আগে অবশ্যই গরম পানি আর সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে হাত। ২. যে গ্লাভস বা হাতমোজা পড়ে একবার বাইরে ঘুরে এসেছেন, খুব ভালোভাবে পরিষ্কার না করে তার দ্বিতীয়বার ব্যবহার করবেন না। ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার করবেন না। ৩. ধুলো আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন। তবে ঘরের ভেতরে বা বাইরে এ ধরনের মাস্ক করোনাভাইরাস থেকে খুব বেশি সুরক্ষা হয়ত দেবে না। কাপড় বা কাগজের তৈরি এসব মাস্ক কয়েকবার ব্যবহার করলেই নষ্ট হয়ে যায়। একই মাস্ক দিনের পর দিন ব্যবহার করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে। তারচেয়ে বরং মাস্ক না পরাও ভালো। ৪. কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যা অবশ্যই একবার ব্যবহারের পর ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। ৫. কেউ যদি কাশতে থাকেন বা নাক টানতে থাকেন, কারও মধ্যে যদি সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তার অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ, অন্তত অন্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে। ৬. করোনাভাইরাস যদি ছড়িয়েই পড়ে, নিরাপদ থাকার একটি চেষ্টা হতে পারে ভিড় এড়িয়ে চলা এবং অন্যদের থেকে কিছুটা দূত্ব বজায় রেখে কথা বলা, সেটা হতে পারে দেড় ফুট দূরত্ব। হাত মেলানো বা কোলাকুলি থেকে সাবধান, সেটা সবার ভালোর জন্যই। ৭. বাসায় টয়লেট আর কিচেন থেকে পুরনো সব তোয়ালে সরিয়ে দিতে হবে প্রত্যেকের জন্য আলাদা তোয়ালে। সবাই তার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালেই ব্যবহার করবে, অন্যদেরটা কথনও স্পর্শ করবে না। সব তোয়ালে নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ভেজা বা ড্যাম্প তোয়ালে হতে পারে ভাইরাসের বাসা, সুতরাং সাবধান। ৮. বাসার যে জায়গাগুলোতে সবচেয়ে বেশি মানুষের হাত পড়ে, তার মধ্যে একটি হর দরজার নব। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি যখন আশপাশে, তখন ডোরনব ব্যবহারেও সাবধান। সম্ভব হলে গ্লাভস পরে দরজা খোলা বা বন্ধ করার কাজটি করতে হবে। তা না হলে অন্তত ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে হাত। একই ধরনের সতর্কতা দেখাতে হবে সিঁড়ির রেলিং, ড্রয়ার, কম্পিউটার কি-বোর্ড আর মাউস, ল্যাপটপ, কলম, বাচ্চাদের খেলনা- এরকম যে কোনো কিছুর ক্ষেত্রে যা মানুষ হাত দিয়েই ব্যবহার করে। ৯. আপনি যদি সব সময় নিজের জিনিসপত্রই ব্যবহার করেন, সেগুলো যদি আর কেউ কখনও স্পর্শ না করে, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তবে যদি কখনও অন্যের ব্যবহৃত সামগ্রী আপনাকে ধরতে হয় কিংবা আপনার কিছু অন্যকে ব্যবহার করতে দিতে হয়, অবশ্যই ওই হাত ধোয়ার আগে নাখ, মুখ বা চোখ ছোঁবেন না। ১০. মাংস, ডিম বা শাকসব্জি ভালোভাবে ধুয়ে এমনভাবে রান্না করতে হবে যাতে কোনোভাবে কাঁচা না থাকে। সেই সঙ্গে প্রচুর তরল পানের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
সর্বপ্রথম ১৯৬০ এর দশকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে এটি জীনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশে উৎপত্তি হয় নভেল করোনা ভাইরাসের। গবেষকদের মতে এই ভাইরাস বহনকারী একটি মাংশাসী প্রাণীর দেহ থেকে তা মানুষের দেহে প্রবেশ করে। যা বর্তমানে পুরো পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকারে বিস্তার করেছে। এর পরিবারভুক্ত সকল ভাইরাসই ইতিহাসে মহামারী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল।.
চীনের উহানে গত ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্তের পর এখনও ভাইরাসটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছেন না। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় কার্যকরী ঔষধ বা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য, ছড়ানোর গতিপ্রকৃতি, জড় এবং জীবদেহে সক্রিয়তা কাল ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি আর সেজন্য নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে এবং ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত জীবাণু মুক্ত করতে এবং মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সুরক্ষা পোশাক পরতে বলা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, করোনাভাইরাস কোনোভাবেই যেন নাক, মুখ কিংবা চোখ দিয়ে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করতে না পারে। ভাইরাসটি বায়ুবাহিত (airborne) কিনা কিংবা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মানুষের কাছ থেকে ছড়াতে পারে কিনা এসব বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। আজকের আলোচনায় এই দুইটি বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ভাইরাসটি বায়ুবাহিত (airborne) নয় বলা হলেও ভাইরাসটি যে বায়ু (air) দ্বারা ছড়াতে (spread) পারে বা বায়ুতে ছড়িয়ে (dispersed) থাকতে পারে তা বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করলে ভাইরাসটির বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর বা সংক্রমিত হওয়ার প্রক্রিয়াটা পরিষ্কার হবে বলে মনে করি। একই সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরে থাকার কারণও বুঝা যাবে। অ্যারোসল (aerosol): সাধারণভাবে যেকোনো ভারি পদার্থ (matter) অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূপাতিত হয়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত ভারি “কণা” (particles/droplets) তরল পদার্থ বা গ্যাসের মধ্যে ঝুলন্ত (suspended) থাকতে পারে। গ্যাসের মধ্যে তরল বা কঠিন পদার্থের কণা ঝুলে থাকলে তাকে অ্যারোসল (Aerosol) বলে। যেমন কঠিন ধুলাবালি এবং তরল জলীয় বাষ্প (কুয়াশা) বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এই দুইটিই অ্যারোসল। আর এ কারণেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে রেস্পিরেটরি ড্রপলেট বা হাঁচি-কাশির ফলে বের হওয়া জলকণাকে (Droplets) অ্যারোসল বলা হচ্ছে। ট্রাজেক্টরি (Trajectory): কোনো একটি বস্তু সময়ের সাপেক্ষে শূন্যে যে বক্রপথ অতিক্রম করে তাকে ট্রাজেকটরি বলে। যেমন, আপনি কৌণিকভাবে ওপরের দিকে একটি ঢিল ছুড়লেন। ঢিলটি খানিকটা সময় শূন্যে ভেসে ভেসে বক্রাকার পথে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে (flight path) এবং এক সময় ভূপাতিত হবে। হাঁচি (Sneeze): মানুষ যখন হাঁচি দেয় তখন নাকি তার শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাঁচি দেওয়ার কাজে জড়িয়ে পড়ে। যাই হোক, হাঁচি কী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুটি তথ্য এখানে উল্লেখযোগ্যঃ হাঁচির গড় গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ১০০ মাইল। আর প্রতিবার হাঁচিতে ১ লক্ষাধিক ড্রপলেট (তরল কণা) ১০০ মাইল/ঘন্টা বেগে ছড়িয়ে পড়ে। এবার আসুন আমরা উপরের তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখি। কেউ যদি হাঁচি দেয় তবে তা হাঁচির গতিবেগের (speed) কারণেই একটা উল্লেখযোগ্য বক্রাকার দূরত্ব (ট্রাজেক্টরি/flight path) পর্যন্ত এগুবে। বলা হয়ে থাকে সেটা ২৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। লক্ষাধিক ড্রপলেটের মধ্যে সবার আকার (size) এবং ভর (mass) এক সমান হবার কথা নয় (unequal size distribution)। ফলে কিছু ড্রপলেট ট্রাজেক্টরি পথ অতিক্রম করে মাটিতে পড়ে যাবে। অপেক্ষাকৃত হালকা ড্রপলেটগুলো কুয়াশার মত বাতাসে অনেকটা সময় ভাসতে থাকবে (suspended)। এখানে হাঁচির সাথে বেরিয়ে আসা জলকণাগুলো অ্যারোসল-এর মতো আচরণ করবে। তখন যদি বাতাসের বেগ থাকে (wind flow) তবে সে আরও অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এই সময়কালের মধ্যে ড্রপলেট সমৃদ্ধ বাতাসের (air) মধ্যে কেউ অবস্থান করলে বা ওই এলাকার মধ্যে দিয়ে কেউ হেটে গেলে তার গায়ে ড্রপলেটগুলো লেগে যেতে পারে। এ কারণেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কম করে হলেও দুই মিটার বা প্রায় ছয় ফুট দূরে থাকতে বলা হয়। এতটা দূরত্বে থাকলে ট্রাজেক্টরি বা অ্যারোসলের মধ্যে সরাসরি পড়ে যাওয়া এড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে আপাতদৃষ্টিতে জনশূন্য স্থানে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে নিঃসৃত অ্যারোসল (যে ড্রপলেটগুলো বেশ খানিকটা সময় বাতাসে ভাসতে থাকবে) বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। কেননা, করোনাভাইরাসের গড় সাইজ হচ্ছে ১২০ ন্যানোমিটার। ফলে হাঁচি থেকে নিঃসৃত জলকণা বাতাসে উবে (vaporized) গেলেও ভাইরাসটি বাতাসে ভেসে থাকতে পারার কথা। কারণ তার চেয়ে ভারি এবং আকারে বড় ধুলাবালিও কিন্তু বাতাসে অনেকক্ষণ ভাসতে থাকে। তাছাড়া করোনাভাইরাসের গায়ে থাকা স্পাইকগুলো (spikes) তাকে বাতাসে ভাসতে সাহায্য করার কথা। তাই এই অ্যারোসলের স্পর্শ এড়াবার জন্য মাস্ক পরতে হয়, গ্লাভস পরতে হয়। তবে ট্রাজেক্টরি (বক্রাকার পথ) এবং অ্যারোসল দুটোকেই এড়িয়ে চলার জন্য উত্তম উপায় হচ্ছে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে থাকা। অন্যদিকে কোনো প্রকার লক্ষণ না থাকলেও করোনাভাইরাস যে কারও শরীরে থাকতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস পজিটিভ এমন অনেক রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা যায়নি। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে লক্ষণ দেখা দেওয়া, না দেওয়া, অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করতে পারে। একটু সাধারণ জ্ঞান খাটালে তার কার্যকারণ বুঝা যায়। ভাইরাস শরীরে ঢুকলেই শরীরের নিরাপত্তা বাহিনী, অ্যান্টিবডি তাকে আক্রমণ করে দমাতে চেষ্টা করে। যার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত শক্তিশালী করোনাভাইরাস তার শরীর থেকে তত দ্রুতই হারিয়ে যায় অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই ভাইরাস কাবু করতে পারে না এবং তার শরীরে ভাইরাসজনিত লক্ষণ দেখা দেওয়ার কথা নয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রার উপর ভিত্তি করে কারও শরীরে লড়াই করে ভাইরাস এক সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, কারও শরীরে কয়েকদিন যুদ্ধ চলে, লক্ষণ দেখা যায় এবং এক সময় সেরেও যায়। আবার কারও শরীর ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে টিকতে পারে না, লক্ষণ প্রকট হয় এবং বাহির থেকে তাকে সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয় এবং এক সময় সেরে উঠে। আবার কেউ কেউ সেই সাপোর্ট দেওয়ার পরেও ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে পেরে ওঠে না এবং অবশেষে মারা যান। এই হচ্ছে মোটামুটি লক্ষণ দেখা যাওয়া না যাওয়ার অবস্থা। ধরুন কারও শরীরে ভাইরাস আছে, অ্যান্টিবডির সাথে যুদ্ধ চলছে কিন্তু লক্ষণ এখনও দেখা দেয়নি। এই অবস্থায় অন্য কেউ তার সংস্পর্শে এলে তারও করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর এ কারণেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত, লক্ষণ নেই তেমন কারও সাথেও মেলামেশা করা উচিত নয়। সর্বোপরি লক্ষণ নেই তেমন ব্যক্তি বাইরে থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক নিঃসৃত অ্যারোসল গায়ে মেখে আসেননি তা তো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তাই নিজেকে নিরাপদে রাখার উত্তম উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা, একান্তই বাইরে যেতে হলে মাস্ক, গ্লাভস পরে থাকা, দ্রুত কাজ সেরে ঘরে ফেরা এবং ঘরে এসে প্রথমে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, পরিধেয় কাপড়সহ ভালভাবে গোসল করা।